চোখের রোগ নারীদের বেশি হয় যেসব কারণে

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, চোখের রোগগুলো নারীদেরই বেশি হয়। এসব রোগের মধ্যে শুষ্ক চোখ, গ্লুকোমা, ছানি, বয়সজনিত ম্যাকুলার ক্ষয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ও থাইরয়েডজনিত চোখের রোগ অন্যতম।

শুনলে হয়তো অবাক হবেন, দুনিয়াজুড়ে যত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আছেন তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী। তার মানে কি চোখের সমস্যাগুলো নারীদেরই বেশি হয়? গবেষকেরা নানাভাবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে নারীদের আয়ু পুরুষদের চেয়ে একটু বেশি। আর চোখে ছানি, ম্যাকুলা ডিজেনারেশন, রেটিনোপ্যাথি ইত্যাদি বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নারীরা বেশ পিছিয়ে। আর কে না জানে এসব রোগ মানুষের চোখ নষ্ট করে দেয়। আবার কিছু অটোইমিউন রোগ (যেমন: রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস, লুপাস ইত্যাদি) নারীদের বেশি হয়। এসব রোগে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখের শুষ্কতা সমস্যাও নারীদের বেশি।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীরা গর্ভধারণের সময় বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। এ সময় তাঁদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে, বাড়ে চোখের সমস্যাও। অনেক নারী অপুষ্টির শিকার। দৃষ্টিশক্তি হারানোর জন্য ভিটামিনের অভাব দায়ী। আবার গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে যুক্ত অনেক নারী আঘাত বা দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এসব রোগের কারণ

আয়ুষ্কাল: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে নারীদের আয়ু পুরুষদের তুলনায় একটু বেশি। আর চোখের বিভিন্ন রোগ বয়স বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নারীরা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বড় ধরনের কোন রোগে ভোগেন না। অন্যদিকে পুরুষেরা সাধারণত ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এজন্য বয়সকে চোখের বিভিন্ন রোগ হওয়ার একটি প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।

জন্মবিরতিকরণ বড়ি: কিছু কিছু জন্মবিরতিকরণ বড়ি দৃষ্টিজনিত সমস্যার জন্য দায়ী। এসব বড়িতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন থাকে যা চোখের রোগের জন্য দায়ী।

রজোনিবৃত্তি বা মেনোপোজ: রজোনিবৃত্তি বা মেনোপজ হল মহিলাদের জীবনের এমন একটি সময় যখন তাদের রজস্রাব (মাসিক) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। তারা আর গর্ভধারণ করতে সক্ষম থাকে না। এটি সাধারণত ৪৯ থেকে ৫২ বছর বয়সে হয়ে থাকে। এ সময় মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে মহিলাদের শুষ্ক চোখসহ চোখের অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়।

হরমোনাল কারণ: বয়সন্ধিকাল, গর্ভধারণ মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।

অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করা: গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষের তুলনায় নারীরা অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করে থাকে। ওষুধগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, দুশ্চিন্ত কমানোর ওষুধ অন্যতম। এসব ওষুধ চোখের দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।

অটো ইমিউন রোগ: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন নিজ শরীরের ক্ষতি করে থাকে তখন তাকে অটো ইমিউন রোগ বলে। যদিও এর সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, কিন্তু ধারণা করা হয় অটো ইমিউন রোগ পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি হয়।

সাধারণত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, জগ্রেন্স সিনড্রোম, গ্রেভস রোগ এইসব অটো ইমিউন রোগ চোখকে প্রভাবিত করে। এ রোগের লক্ষণের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, চোখে অস্বস্তি অন্যতম।

 

তাহলে নারীরা কীভাবে নিজেদের চোখ বিষয়ে আরও একটু বেশি সচেতন হবেন? কয়েকটি পরামর্শ:

* বয়স ৪০ পেরোনোর পর থেকে প্রতিবছর একবার করে চোখের সম্পূর্ণ পরীক্ষা করবেন। চোখ দেখানো মানে কেবল চোখের পাওয়ার দেখানো নয়। চোখের ভেতরের তরলের চাপ, পেছনের রেটিনা ইত্যাদিও দেখতে হবে।

* ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ থাকলে বিশেষভাবে সচেতন হোন। এগুলো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা জরুরি।

* চোখে ছানি পড়া বা দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসাকে অনেক বয়স্ক নারী অবহেলা করেন এবং অযথা দেরি করেন। এটা বড় ভুল।

* চোখে যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহারে সতর্ক হোন, লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তা-ই। যে জিনিসে চোখে অ্যালার্জি হয় বা লাল হয়ে যায়, চুলকায়—সেটা আর কখনোই ব্যবহার করবেন না। রোদে গেলে রোদচশমা ব্যবহার করবেন।

 


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *