বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়ার স্বপ্ন কার না থাকে। পর্যাপ্ত তথ্য না জানার কারণে আমরা সেই সুযোগ নিতে পারি না। যারা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাননি, তাদের জন্য মালয়েশিয়া হতে পারে উচ্চশিক্ষার আদর্শ জায়গা। কারণ সেখানে পড়াশোনার খরচ বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও কম। আবার কোথাও কোথায় প্রায় সমান। তাই বাংলাদেশে যে অর্থ ব্যয় করবেন সেই অর্থে মালয়েশিয়ায় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ নিন। জেনে রাখা ভালো ইউরোপের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে মালয়েশিয়ায়। কম খরচে মানসম্পন্ন কোর্সের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া। একারণে মালয়েশিয়া এশিয়ার ইউরোপ খ্যাতি পেয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন। সঙ্গে থাকছে পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ। চলুন জেনে নেয়া যাক মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে হলে কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন।
কোনো দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কত, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ কেমন, পার্ট-টাইম চাকরির কোনো সুযোগ আছে কি না ইত্যাদি। এ ছাড়া নিজের সামর্থ্যের কথাও ভাবতে হবে। এর পর হিসাব কষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মালয়েশিয়ায় সরকারি ও উচ্চ মানের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই ভর্তি হওয়া যায়।
এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএসও প্রয়োজন হয় না। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে টিউশন ফিও কম। মূলত এই কয়টি কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান।
উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো। সেসব শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ ৫.০০ কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ও বেরসকারি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি তারা মালয়েশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। ইউএম, আইআইইউএম, ইউপিএম, ইউআইটিএম, ইউইউএম, এমইডিআইইউ, টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া, সানওয়ে, আইএনটিআই, নীলাই, আইআইসি, এফটিএমএস ইত্যাদিতে পড়তে আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে জেনে নিতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কেমন।
যেমন- মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমইডিআইইউ ইত্যাদির খরচ বিষয় ও ক্রেডিট অনুসারে (শুধু টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ বাদে) বছরে ৫ থেকে ১০ হাজার রিংগিত (এক লাখ ১০ হাজার থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা), আবার টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার রিংগিত (চার লাখ ৪০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা)।
তবে চিন্তা নেই আপনি যদি বেশি খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। খরচ চালাতে হিমশিম খান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনেরও সুযোগ পাবেন।
ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা মোটামুটি হলে তারা ইউইউএম, এমইডিআইইউ ইত্যাদি কম খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। তবে মনে রাখবেন ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এমন শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে আসা ঠিক নয়।
মালয়েশিয়ায় পড়ার খরচ বাংলাদেশি অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও কম। এক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি দারুল ইমান মালয়েমিয়া (ইউডিএম), ইউনিভার্সিটি ইসলাম আন্ত্রাবাংসা ও ইউনিভার্সিটি মালয়েমিয়াসহ এ জাতীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলা যায়।
জেনে রাখা ভালো, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ায় তাদের শাখা খুলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কোর্স পরিচালনা করছে।
ইংরেজী বহুল প্রচলিত হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হয় না এখানে। জীবনযাপনের ব্যয় কম, বছরে ৩,৭৫০ ডলারের মত। ১০০ টির বেশি দেশের ৫০ হাজারের মত বিদেশী শিক্ষার্থী এখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০ টি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ ২৪ টি, পাবলিক কমিউনিটি কলেজ ৩৭ টি, ৩৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা, ৫০০ টি বেসরকারী কলেজ, ৩৮ টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলীয় ধাঁচের) রয়েছে।
খন্ডকালীন চাকরি
এক সপ্তাহের বেশি ছুটি থাকলে বা সেমিস্টার বিরতির সময় শিক্ষার্থীরা খন্ডকালীন চাকরি করতে পারেন, তবে সেটা সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশি নয়।
চলুন জেনে নেয়া যাক স্টুডেন্ট ভিসার কিছু শর্ত :
>>> মালয়েশিয়ার কোন সরকারি বা বেসরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন কোন কোর্সে ভর্তির অনুমতি থাকতে হবে। অবশ্যই ইংরেজি বিষটি কোর্সে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
>>> পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া এবং ভ্রমণ ব্যয় নির্বাহের আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হবে।
>>> কেবলমাত্র পড়াশোনার জন্য এ ভিসা দেয়া হবে।
>>> সুস্বাস্থ্য ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
যেভাবে পেতে পারেন স্টুডেন্ট পাস : মালয়েশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমস্ত আবেদন করতে হবে। অনুমোদন এবং স্টুডেন্ট পাস ও ভিসা ইস্যুর কাজটি করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট। তবে চীনের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়ার কাজটি করে চীনে মালয়েশীয় দূতাবাস বা কাউন্সিল অব মালয়েশিয়া। ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অনুমোদন নিয়ে পুরো কোর্স চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীর বাবা-মা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে পারেন। আর পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রী, সন্তানরাও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে পারেন।
ইমিগ্রেশন ও স্টুডেন্ট পাস সংক্রান্ত তথ্যের জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করা যেতে পারেন।
ফোন: ৬০৩-৮৮৮০১০০০
ফ্যাক্স: ৬০৩-৮৮৮০১২০০
ওয়েবসাইটের জন্য www.imi.gov.my এই ঠিকানায় যান।